তবে অফলাইন হোক বা অনলাইন, অবশ্যই কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। কোয়ারেন্টাইনের এ সময়ে অনেক মানুষই বাড়ি থেকে কাজ করছেন। এমন অবস্থায় কোনো অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা জরুরি কোনো সভায় শারীরিকভাবে যোগ দিতে না পারলেও কর্তৃপক্ষ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সাথে সহজেই বৈঠক করতে পারেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু অ্যাপস ও সফটওয়্যার সম্পর্কে, যার মাধ্যমে সহজে এবং কার্যকরভাবে বাড়ি থেকে কাজ করা যাবে লকডাউনের এ সময়ে।
জুম মিটিং:
আপনি কি একই সময়ে একাধিক অংশগ্রহণকারীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করার জন্য বিনামূল্যের একটি সফটওয়্যার বা অ্যাপের সন্ধান করছেন? যদি তাই হয়, তবে ‘জুম মিটিং’ ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
এ অ্যাপের বেসিক প্লানের মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ১০০ জন অংশগ্রহণকারীসহ একটি ভিডিও মিটিং হোস্ট করার অনুমতি পাবেন। এর মাধ্যমে আপনি পূর্বনির্ধারিত কোনো মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। অংশগ্রহণকারীরা বিনামূল্যে মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ডেস্কটপের মাধ্যমে জুম মিটিংয়ে যোগদান করতে পারবেন। একজন আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারী জুম অ্যাকাউন্ট না করেও মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন। প্রতিটি ভিডিও মিটিং ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলবে।
আর কী আছে? সময়ের সীমাবদ্ধতা ছাড়াই জুম অ্যাপের মাধ্যমে একে অন্যের সাথে ভিডিও মিটিংয় করা যায়। এছাড়া বিনামূল্যে ব্যবহারকারীদের অন্য অংশগ্রহণকারীদের সাথে ক্রিন শেয়ারিং এবং স্থানীয়ভাবে ভিডিও মিটিং রেকর্ড করার অনুমতি দেয়া হয়। দারুণ সব ফিচার থাকায় প্লে স্টোরে জুমের জনপ্রিয়তা এখন আকাশ ছোঁয়া।
তবে, আপনি যদি ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন সময়ের সীমাবদ্ধতা না চান তাহলে বেছে নিতে পারেন জুমের প্রো প্ল্যান। যাতে আপনার মাসিক খরচ পড়বে ১৪.৯৯ ডলার বা ১ হাজার ২৭৩ টাকা (ডলার প্রতি ৮৫ টাকা হিসাবে)। এ প্লানের অধীনে ১০০ জন অংশগ্রহণকারীর সাথে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করা যাবে। এছাড়া, এ প্লানের আওতায় মিটিংগুলো রেকর্ড করে রাখার জন্য ১ জিবি ক্লাউড স্টোরেজও সরবরাহ করে জুম।
ছোট এবং মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোর সুবিধার্থে জুম একটি ব্যবসায়িক প্ল্যানও অফার করে থাকে, যার জন্য এক হোস্টের ব্যয় করতে হবে প্রতিমাসে ১৯.৯৯ ডলার বা ১ হাজার ৬৭৮ টাকা। এ প্ল্যানের আওতায় আপনি একবারে ৩০০ অংশগ্রহণকারীর সাথে একটি জুম মিটিং হোস্ট করতে পারবেন। এর বাইরে ‘এন্টারপ্রাইজ’ বা ‘এন্টারপ্রাইজ প্লাস’ নামের প্ল্যানও আপনি বেছে নিতে পারেন আরও বড় পরিসরের মিটিংয়ের জন্য।
গুগল হ্যাংআউটস মিট:
উদ্ভাবনী পরিষেবা দিয়ে আমাদের অবাক করার ক্ষেত্রে গুগল সবসময়ই এগিয়ে থাকে। গুগলের ক্লাউড ভিত্তিক অফিস বা ব্যবসা পরিষেবা ‘গুগল জি স্যুট’ বান্ডেলের অধীনে আপনি ‘গুগল হ্যাংআউটস’ ফিচারগুলো পাবেন। গুগল হ্যাংআউটসে সর্বোচ্চ ১০ জন অংশগ্রহণকারী যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ ভিডিও চ্যাট এবং ভিডিও কল করতে পারবেন। বিনামূল্যের একটি জিমেইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি গুগল জি স্যুট হ্যাংআউটস ব্যবহার করতে পারবেন।
সম্প্রতি গুগল জি স্যুটিকে ‘গুগল হ্যাংআউটস মিট’ ফিচারের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী ‘গুগল হ্যাংআউটস’ সুবিধার পরিবর্তিত সংস্করণ।
ক্লাউডভিত্তিক এ যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত ডেটা ট্রান্সমিশন এবং উচ্চমানের ভিডিও ফুটেজসহ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিটিংয়ের জন্য আপনাকে সহায়তা করতে পারে। স্মার্টফোনের অ্যাপ এবং যেকোনো ওয়েব ব্রাউজার (ল্যাপটপ/ডেস্কটপের জন্য) ব্যবহার করে গুগল হ্যাংআউটস মিট ব্যবহার করা যায়।
জি স্যুট বেসিক প্ল্যানের জন্য একজন ব্যবহারকারীর প্রতি মাসে ৬ ডলার বা ৫১০ টাকা খরচ হয়। এ প্ল্যানের একটি সেশনে সর্বোচ্চ ২৫ জনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের অনুমতি পাওয়া যায়।
জি স্যুট বিজনেস প্ল্যানের জন্য একজন ব্যবহারকারীর প্রতি মাসে ১২ ডলার বা ১ হাজার ২০ টাকা খরচ হয়। এ প্ল্যানের আওতায় আপনি একবারে ৫০ জনের সাথে ভিডিও মিটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
জি স্যুট এন্টারপ্রাইজ প্ল্যানের জন্য একজন ব্যবহারকারীর প্রতি মাসে ২৫ ডলার বা ২ হাজার ১২৪ টাকা খরচ হয়। এ প্ল্যানের আওতায় আপনি একবারে ১০০ জনের সাথে ভিডিও মিটিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
গুগল ড্রাইভের ক্লাউড স্টোরেজ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে আপনি মিটিংগুলো রেকর্ড এবং সংরক্ষণ করতে পারেন। গুগল ড্রাইভ ‘জি স্যুট বেসিক’ প্ল্যানের আওতায় প্রতি ব্যবহারকারীকে ৩০ জিবি স্টোরেজ সরবরাহ করে। তবে, ‘জি স্যুট বিজনেস’ এবং ‘জি স্যুট এন্টারপ্রাইজ’ অ্যাকাউন্টের আওতাধীন গ্রাহকরা সীমাহীন স্টোরেজ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া ‘জি স্যুট এন্টারপ্রাইজ’ প্ল্যানে সাবস্ক্রাইব করে আপনি লিংকগুলো শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার ভিডিও মিটিংটি প্রায় ১ লাখ দর্শকের কাছে সম্প্রচার বা লাইভ স্ট্রিম করতে পারেন।
স্কাইপ:
আপনি কি অফুরন্ত সময় ধরে ভিডিও কনফারেন্স করার জন্য বিনামূল্যের কোনো সফটওয়্যার খুঁজছেন? তাহলে বেছে নিতে পারেন স্কাইপ। বাসা থেকে অফিস করছেন এমন ছোট কোনো দলের জন্য এ অ্যাপটি হতে পারে সহায়ক। স্কাইপ ব্যবহার করে হোস্টসহ একসাথে ৫০ জনের জন্য ভিডিও মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া এ অ্যাপের আপগ্রেডেড ফিচারগুলো পেতে আপনি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন ‘স্কাইপ ফর বিজনেস’ পরিষেবা।
একটি সক্রিয় ওয়াইফাই সংযোগের সাথে আপনি স্কাইপের (৫.০ বা আপগ্রেড সংস্করণ) মাধ্যমে একটি ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করতে পারেন। ভিডিও কনফারেন্স কলিং ফিচার পেতে আপনার স্কাইপ অ্যাকাউন্টটি নিবন্ধন করার সময় গ্রুপ ভিডিও কলিং সাবস্ক্রিপশন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী সবাইকে নিজ নিজ মোবাইল বা ডেস্কটপে সাইন আপ এবং স্কাইপ অ্যাপস বা সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে। স্কাইপ অ্যাপ বা সফ্টওয়্যার ইনস্টল করার পর আপনি একটি ভিডিও মিটিং হোস্ট করতে পারবেন।
ফ্রিকনফারেন্স:
এখন পর্যন্ত আমরা ভিডিও মিটিংয়ের জন্য অ্যাপস বা সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু আপনি যদি আপনার সতীর্থদের সাথে একটি অডিও কনফারেন্স হোস্ট করতে চান সে ক্ষেত্রে ফ্রিকনফারেন্স.কম ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। কোয়ারেন্টাইনের এ সময়ে বিনামূল্যে অনলাইন মিটিংয়ের এটি হতে পারে অন্যতম মাধ্যম। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ফ্রিকনফারেন্স ডটকমের পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন।
‘ফ্রি’ প্ল্যানের মাধ্যমে ১০০ অংশগ্রহণকারী টেলিফোন কলে অংশ নিতে পারেন। এ প্ল্যান বিনামূল্যে ভিডিও মিটিংয়ের জন্য কেবল ৫ জন ওয়েব অংশগ্রহণকারীকে অনুমতি দেয়। এছাড়া আপনি অংশগ্রহণকারীদের সাথে ক্রিন শেয়ার করতে পারেন এবং একটি অনলাইন হোয়াইটবোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া, প্রতি মাসে ৯.৯৯ ডলার বা ৮৪৯ টাকা দিয়ে আপনি ভিডিও কনফারেন্সিং অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ১৫ জন পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য 'স্টার্টার' প্ল্যানে নিবন্ধন করতে পারেন। এ প্ল্যানের মাধ্যমে আপনি মিটিংয়ের অডিও সংরক্ষণ করতে পারবেন।
৫০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে একটি ভিডিও মিটিং হোস্ট করতে হলে আপনি ‘প্লাস’ প্ল্যানটি সাবস্ক্রাইব করতে পারেন, যার জন্য প্রতি মাসে ২৪.৯৯ ডলার বা ২ হাজার ১২৩ টাকা ব্যয় হবে। এ প্ল্যানের মাধ্যমে আপনি মিটিংগুলোর অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিং উভয়ই সংরক্ষণ করতে পারবেন।